Advertisement

Main Ad

ডেঙ্গু জ্বরকে শুধুমাত্র ভাইরাল জ্বর ভেবে উপেক্ষা করা ঠিক না। দুটি একে অপরের থেকে আলাদা হলেও ডেঙ্গু তুলনামূলকভাবে ভয়ংকর। প্রাথমিক লক্ষণগুলি একই হওয়ার কারণে আপনি ঠিক কী রোগে ভুগছেন, তা প্রথম অবস্থায় বোঝা কঠিন হতে পারে। 

এই আর্টিকেলে আমরা চেষ্টা করেছি ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ, কারণ এবং প্রতিকারের মতো বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করতে। এতে সঠিক সময়ে আপনি ডেঙ্গু রোগ নির্ণয় করে চিকিৎসা শুরু করতে পারবেন। 




ডেঙ্গু জ্বরের কারণ কী?
প্রথমে আমাদের জানা প্রয়োজন, এডিস মশা কামড়ালেই কি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয় কিনা? চিকিৎসকরা কিন্তু ঠিক তেমনটা বলছেন না। বরং তারা বলছেন, পরিবেশে উপস্থিত কোনো ভাইরাস যদি কোনো এডিস মশার মধ্যে সংক্রমিত হয়, শুধুমাত্র তখনই ওই মশার কামড়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। 
স্ত্রী এডিস মশা ভাইরাসের বাহক হিসেবে কাজ করে। সংক্রমিত ব্যক্তি থেকে সুস্থ ব্যক্তিতে এরা এই ভাইরাস ছড়াতে থাকে।
হালকা ডেঙ্গু জ্বরের কারণে প্রচণ্ড জ্বরের মতো উপসর্গ দেখা দেয়। ডেঙ্গু ভাইরাস সাধারণত চার প্রকার। তবে যারা আগে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের পরবর্তীতে এ রোগ দেখা দিলে প্রাণঘাতী হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।


ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ বা উপসর্গগুলো কী কী?
তিন থেকে পনেরো দিনের মধ্যে ভাইরাস বহনকারী এডিস মশার কামড়ে যে কারোরই ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ বা উপসর্গ দেখা দিতে পারে। এ কারণে ডেঙ্গু জ্বরের উপসর্গগুলো সবারই ভালোভাবে জানা উচিত। এই উপসর্গগুলোর মধ্যে রয়েছে- 

১.জ্বর ১০২ থেকে ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত হতে পারে, 

২.মাথাব্যথা, 

৩.বমি, 

৪.চোখের পেছনে ব্যথা, 

৫.চামড়ায় লালচে দাগ (র‍্যাশ), 

৬.শরীরে শীতলতা অনুভব করা, 

৭.ক্ষুধা কমে যাওয়া, 

৮.কোষ্ঠকাঠিন্য, 

৯.স্বাদের পরিবর্তন, 

১০.হৃদস্পন্দনের হার ও রক্তচাপ কমে যাওয়া এবং 

১১.পেশিতে ও গাঁটে ব্যথা হওয়া।



ডেঙ্গু রোগের ধরন
চিকিৎসকদের মতে, মানুষের সাধারণত দুই ধরনের ডেঙ্গু জ্বর হয়- ক্ল্যাসিকাল এবং হেমোরেজিক। ক্ল্যাসিকালে জ্বর সাধারণত দুই থেকে সাত দিনের মধ্যে ভালো হয়ে যায়। বিপদ ঘটে হেমোরেজিকের ক্ষেত্রে। এই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ব্যক্তির অবস্থা পাঁচ থেকে সাত দিন পর মারাত্মক সংকটাপন্ন হতে পারে।
হেমোরেজিকের ক্ষেত্রে রোগীর রক্তপাত হয়, রক্তে অনুচক্রিকার মাত্রা কমে যায় এবং রক্ত প্লাজমা কমে যায়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আবার দেখা দেয় ডেঙ্গু শক সিনড্রোম। এতে রক্তচাপ বিপজ্জনকভাবে হ্রাস পায়। কিছু সময় আক্রান্ত ব্যক্তির মুখ, দাঁতের মাড়ি এবং নাক থেকে রক্তপাত ঘটে। মলের সঙ্গেও মাঝে মাঝে রক্ত বের হতে পারে। 
ডেঙ্গু আক্রান্ত নারীর ক্ষেত্রে পিরিয়ডের সময়ও অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়। এমনকি কারো কারো রক্তের প্লাটিলেট বা অণুচক্রিকা কমে গিয়ে শরীরের চামড়ার নিচে ইন্টারনাল ব্লিডিং হয়। পরিস্থিতি আরো জটিল হয়ে যখন রোগীর হাত-পা দ্রুত ঠান্ডা হওয়া শুরু করে এবং রক্তচাপ কমে যায়। 
আক্রান্ত ব্যক্তি এ সময় মাত্রাতিরিক্ত ঘামা শুরু করে। এতে তার মধ্যে এক ধরনের ছটফটানিও আরম্ভ হয়। কেউ কেউ বমি করে বা তাদের বমি বমি ভাব হয়। এই সময়টায় কোনো কোনো রোগীর হোয়াইট ব্লাড সেল স্বল্পতা, ইলেক্ট্রোলাইটের অসমতা, লিভারে সমস্যা, অথবা ব্রেনে রক্তক্ষরণের মতো ঘটনা ঘটে। এতে তাদের শকে চলে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। দুঃখজনক হলো, এর ফলে অনেক রোগীর মৃত্যুও হতে পারে।


ডেঙ্গু প্রতিরোধে পদক্ষেপ ও সতর্কতা
যেহেতু এডিস মশা দিনে কামড়ায়, তাই দিনের বেলায় ঘুমাতে গেলে ঘরে মশারি অথবা কয়েল ব্যবহার করুন। ঘরের আনাচে-কানাচে অন্ধকারাচ্ছন্ন জায়গায় মশার ওষুধ বা স্প্রে দিতে পারেন। সুরক্ষিত থাকতে দিনে যথাসম্ভব লম্বা পোশাক পরাই ভালো। 
এডিস মশা সাধারণত পরিষ্কার পানিতে বংশ বিস্তার করে। এ কারণে অফিস, ঘর এবং এর আশেপাশে যেন পানি না জমে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। কোথাও পানি জমা থাকলে ২-৩ দিন পর পর তা পরিবর্তন করুন। অনেক সময় ফুলের টবে, এসি বা ফ্রিজের নিচের মতো স্থানে পানি জমে থাকে, ডেঙ্গুর মৌসুমে এসব স্থান পরিষ্কার রাখুন।
ডেঙ্গু হলেই আতঙ্কিত না হয়ে সতর্ক থাকা উচিত। কিছু বিপদ সংকেত জানা থাকলে সতর্ক হতে সুবিধা হবে। অস্বাভাবিক দুর্বলতা, অসংলগ্ন কথা বলা, অনবরত বমি, তীব্র পেটে ব্যথা, গায়ে লাল ছোপ ছোপ দাগ, শ্বাসকষ্ট, হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাওয়া, প্রস্রাবের সঙ্গে রক্তপাত, প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া অথবা রোগীর মুখ, নাক, দাঁতের মাড়ি, পায়ুপথে রক্তক্ষরণ, পিরিয়ডের সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ, রক্তবমি হলে- দেরি না করে, সঙ্গে সঙ্গেই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

Post a Comment

Previous Post Next Post